History

বিগত ৭৮ বছর আগে বীরভূম জেলার পাঁড়ুই থানার অর্ন্তগত খুষ্টিগিরী গ্রামের একটি দরগাহ্ শরীফের পাদ প্রদীপের তলায় জন্ম নিয়েছিল এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। সৈয়দ শাহ্ মোহাম্মদ আব্দুল হাফিজ সাহেব কর্তৃক মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩৮ সালে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠার পিছনে এক দীর্ঘ কাহিনী আছে কিন্তু সময়ের স্বল্পতায় তা প্রকাশ করা সম্ভব হলো না। আশা করি আগামী বছর এই বর্ষপঞ্জি আরও তথ্যবহুল হয়ে উঠবে। প্রাথমিক অবস্থায় মাদ্রাসাটি একটি খড়ের ছাউনি মাটির ঘরে শুরু হয়। পরবর্তিতে ধীরে ধীরে বিশাল অট্টালিকার আকার ধারণ করেছে। ১৯৩৮ সালে ৭ই এপ্রিল তৎকালীন রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী নবাব বাহাদুর খাজা হাবিবুল্লাহ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শুভ সূচনা করেন এবং সরকারী অনুমোদন লাভ করে। সরকারী অনুমোদন লাভের পর ১৯৯৫ সালে মাদ্রাসাটি মাধ্যমিক স্তরে উন্নতী হয়। বর্তমান মাদ্রাসার পঠন-পাঠন, সিলেবাস, পাঠ- সমাপনান্তে (মাধ্যমিক) সার্টিফিকেট সব কিছুই পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ কর্তৃর্ক প্রদত্ত হয়ে আসছে। এছাড়া ইসলামি শিক্ষার ক্ষেত্রে ইসলাম পরিচয় ও আরবী প্রভৃতি বিষয় গুলিও সমান ভাবে গুরত্ব সহকারে শিক্ষার ব্যবস্থা সরকারী পক্ষ থেকেই করা হয়ে আসছে। তাই বর্তমান মাদ্রাসা শিক্ষা সকলের জন্য নিঃসন্দেহে জরুরী ও ফলপ্রসূ। এই জন্য পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা গুলোতে সকল স্তরের ছাত্র-ছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিপুল সংখ্যায় পড়াশুনা করছে। এই মুহূর্তে মাদ্রাসাতে কর্মরত ১৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা, ইনাদের মধ্যে২ জনকে পার্শ্ব-শিক্ষক পদে পাওয়া গিয়েছে। বর্তমানে এখনও চারজন শিক্ষক/ শিক্ষিকা পদ শূন্য অবস্থায় রয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী পাঁচশত এর অধিক। মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী প্রতিবছর ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে এবং পঠন পাঠন ও যথেষ্ঠ উন্নত হয়েছে। গত ২০১৭ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল ১০০ শতাংশ/এবং ২০১৬ সালে ৯৫ শতাংশ। এছাড়াও এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মাদ্রাসার কৃতি ছাত্র সেখ জামাল উদ্দিন, গ্রাম- গোলাপ বাগ, ২০০১ সালে হাই-মাদ্রাসা ফাইনাল পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে দশম  স্থান অধিকার করে মাদ্রাসাকে গৌরবান্বিত করেগেছে। বহু কৃতি ছাত্র- ছাত্রী এই মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা সম্পূর্ণ করে বেরিয়েগেছে। ঐ সকল ছাত্র- ছাত্রীদের মধ্যে কেউ শিক্ষকতা ও সরকারী পদস্থ অফিসার হিসাবে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আরও আনন্দের কথা ২০১৬ সালে বীরভূম জেলা দৌড় প্রতিযোগীতায় মাদ্রাসার নাইন শ্রেণির ছাত্রী নাসরিন খাতুন, গ্রাম- খুষ্টিগিরী, প্রথম স্থান অধিকার করার পর রাজ্যন্তরে অংশ গ্রহন করে। এছাড়াও ২০১৬ সালে জেলাস্তরে স্বরচিত কন্যাশ্রী- কবিতা প্রতিযোগীতায় মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী খাদিজা খাতুন, গ্রাম- ধানসা, প্রথম স্থান ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী আশরোফা খাতুন দ্বিতীয় আন অধিকার করে পুরষ্কার স্বরূপ যথাক্রমে ৫,০০০/- ও ৩,০০০/- টাকা পেয়ে। জেলাতে মাদ্রাসার মুখ উজ্জ্বল করেছে।

 

মাদ্রাসাতে ছাত্র-ছাত্রীরা আসে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য। শিক্ষা সঠিক ভাবে বাঁচতে শেখায় আর এই বাঁচার উপাদান যোগান দেন শিক্ষক। শিক্ষক জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেন, সঠিক ভাবে এগিয়ে নিয়ে যান, বিচার বুদ্ধির বিকাশ ঘটান, বাইরের জগৎকে চিনতে শেখান, শিক্ষাদানের পাশা- পাশি সততা, দয়া, ক্ষমা, সহিষ্ণুতার বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করেন। এক কথায় বলা যেতে পারে একজন আদর্শ শিক্ষকই সমাজের আদর্শ মানুষ তৈরীর কারিগর। সকল ছাত্র-ছাত্রীই শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছে নিজ সন্তানতুল্য, মা, বাবা যেমন স্নেহ করেন, ভালোবাসেন, শাসন করেন, শিক্ষক- শিক্ষিকিরাও সেই রকম ভালোবাসবেন ও প্রয়োজনে শাসন করবেন। ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকের মধ্যে উপযুক্ত মেলবন্ধন ঘটলে তবেই শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী হবে। মাদ্রাসার পঠন-পাঠন তথা সর্বাঙ্গীন উন্নয়নের জন্য সকল অভিভাবক / অভিভাবিকাগণের সুপরামর্শ আমরা সাদরে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক-

 

সেখ মুকুল

(প্রধান শিক্ষক)