তখন ইংরেজ শাসন চলছে এ দেশে ১৯১৬ খ্রীঃ। তৎকালীন ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস থানার অন্তর্গত দীঘলগ্রাম ইউনিয়নের বর্ধিষ্ণু গ্রাম বহললপুর। এই গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (তখনকার) পাশে বহললপুর নিবাসী ধনাঢ্য ব্যক্তির বহললপুর ছাড়াও বামনিয়া, কিশোরকোনা, শালিকোনা, ঈশ্বরপুর, রাতড়া, মামুদপুর, বোড়া এবং জুংলী (বর্তমান রামকৃষ্ণপুর), হাবিসপুর, চাঁদগ্রাম – এইসব গ্রামের ছেলেমেয়েদের অভিভাবকগণ তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উচ্চ শিক্ষার জন্য মাননীয় শ্রীযুক্ত বাবু রামদয়াল দে মহাশয়কে বিদ্যালয় স্থাপন করিবার জন্য আবেদন করলেন।
মাননীয় রামদয়াল দে মহাশয় তাঁর নিজস্ব জমির উপর একটি চার কক্ষ বিশিষ্ট মাটির দেওয়াল খড়ের চালযু্ক্ত বিদ্যালয় গৃহ নির্মান করে দেন। বিদ্যালয়টিতে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেনির পঠন পাঠন আরম্ভ হয়। শিক্ষক মহাশয়দের বেতন ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন রামদয়াল দে মহাশয়ের বর্ধমান এস্টেট ও স্থানীয় অভিভাবক তথা স্থানীয় বিশিষ্টজনদের তত্ত্বাবধানে।বিদ্যালয় পরিচালনা করেন অভিভাবক প্রতিনিধিরা যা বিদ্যালয়ের নথিভুক্ত রেকর্ড থেকে জানা যায়। এই ভাবেই বাঁকুড়া জেলার পূর্ব সীমান্তে নিভৃত পল্লীর অনাড়ম্বর পরিবেশে উচ্চ শিক্ষার প্রদীপ জ্বলতে থাকল। তখনকার ভারতবর্ষের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে ছিল পাঠশালা, টোল, মক্তব ইত্যাদি। তার পরিপ্রেক্ষিতে এই মহান প্রচেষ্টা সাধুবাদ যোগ্য। পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেনির বিদ্যালয়টির সরকারী স্বীকৃতি অর্থাৎ Recoginised as a 2 class ১৯৪৬ সালে অনুমোদন পেল। তারপর সেই শুভক্ষন, শুভদিন অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হল। এই স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মিষ্টিমুখ করার জন্য D.I of Schools(S.E), Bankura থেকে ডাক বিভাগ মারফৎ টাকা পাঠানো হয় যা বিদ্যালয়ের রেকর্ড থেকে জানা যায়।
১৯৬৪ খ্রীঃ ৪ ক্লাস অর্থাৎ জুনিয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়, তারপর ১৯৬৬ খ্রীঃ বিদ্যালয়টি X Class এতে উন্নীত হয়। এই ভা্বে এই বিদ্যালয় থেকে WBBSE এর পরীক্ষা দিয়ে বহু মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন সরকারী ও আধা সরকারী প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কর্মরত আছেন বা কেহ কেহ অবসর নিয়েছেন তাদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে।
তারপর দীর্ঘদিন ১০ম শ্রেনি পর্যন্ত বিদ্যালয়ের পঠন পাঠন চলতে থাকে এবং ১৯৭২ খ্রীঃ পর বিদ্যালয়টি Salary Deficit Scheme এর আওতায় আসে। এর ফলে শিক্ষক মহাশয়গণকে বেতন দেওয়া সংক্রান্ত কোন সমস্যা থাকল না এবং সেই সঙ্গে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য বিদ্যালয়ে একের পর এক মাটির বিদ্যালয় কক্ষ নির্মান হতে থাকল, এমন কি শিক্ষক মহাশয়গনের বেতনের টাকা থেকেও বিদ্যালয় ভবন নির্মান করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাধ্যমে সর্বশিক্ষা মিশন (SSM) এর সৌজন্যে দ্বাদশ অর্থ কমিশনের টাকায় ও স্থানীয় বিধায়ক এলাকা উন্নয়নের মাটির ভবনের পরিবর্তে পাকা বিদ্যালয় ভবন নির্মান হতে থাকল। বিদ্যালয়ের আদি মাটির শ্রেনিকক্ষটির জায়গা বাদে বর্তমান বিদ্যালয়ের যে সব বিল্ডিং বর্তমান আছে, সেই জায়গাটিও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমি দপ্তরের অধীন ছিল। তৎকালীন সময়কার শিক্ষক মহাশয়গণ উক্ত ন্যস্ত ভূমিগুলি এবং বর্তমান খেলার মাঠটিও বিদ্যালয়ের নামে রেকর্ড করাইয়া দিয়াছিলেন, সে কারণে আজ বিদ্যালয়ের নিজস্ব খেলার মাঠ এবং বিদ্যালয় এলাকাটি সম্পূর্ন বিদ্যালয়ের নিজস্ব।
২০০৪ সালে বিদ্যালয়টি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয় (Vide Memo No- DS(A)SD/89/Recog/04,dated 17-07-04)। বিদ্যালয়ের পঠন পাঠনের মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় পাশের হার ভালো মানে পৌঁছানোর জন্য একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেনিতে ছাত্র ভর্ত্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রেনিকক্ষের অভাব বিশেষভাবে অনুভূত হয়। ২০০৪ সালের পূর্বেও বিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকের বিল্ডিংটি ছাড়া সমস্ত শ্রেনিকক্ষ ছিল মাটির তৈরী। এমনকি বিদ্যালয়ের স্টাফ রুমটিও মাটির তৈরী এবং টিন ও অ্যাসবেস্টস এর ছাউনি। সর্বশিক্ষা মিশন (বাঁকুড়া) এর আর্থিক সহায়তায়, MLA কোটার অর্থানুকূল্যে, বিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিলের সাহায্যে এবং শিক্ষা দপ্তর থেকে প্রাপ্ত Capital grant (2015-2016 আর্থিক বছর) এর সহায়তায় বিদ্যালয়ের মাটির ভবনগুলি অপসারণ করে মোট নয়টি অতিরিক্ত শ্রেনিকক্ষ নির্মিত হয়েছিল। পূর্বের মাটির বাড়িগুলি আজ শুধুই স্মৃতি। বর্তমানে বিদ্যালয়ের শ্রেনিকক্ষের সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। জাগতিক নিয়মানুযায়ী অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ এই তিনকালকেই অবলম্বন করে এগিয়ে যেতে হবে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে।