History

 আমডোব জুনিয়র হাই স্কুল প্যাডে লেখা আছে যে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৫০ সালে। কিন্তু পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি নিয়ে আমাদের বিদ্যালয় সরকারি অনুমোদন লাভ করে ০১.০১.১৯৫৭ থেকে। প্রকৃতপক্ষে ১৯৫০ সাল থেকে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা শুরু হয় এবং তা বাস্তবায়িত হয় ১৯৫৭ সালে। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন নথিপত্র ঘেঁটে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘটনা যা জানা যায় তা এইরূপ -

১৯৫৬ সালে আমডোব নিবাসী শ্রী  শ্রীপতিনাথ সেন মহাশয় বিদ্যালয়কে ৮ শতক জমি দান করেছিলেন।  টিনের চালা যুক্ত ঘরে এখানেই আমডোব জুনিয়ার হাই স্কুলের গোড়া পত্তন হয়।  বর্তমানে এই জমিতেই আমডোব প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত।  ২০.০৪.৫৭ তারিখে বিদ্যালয়ের নিজস্ব গৃহে প্রথম পরিচালন সমিতির সভা হয়েছিল।  অনেক জায়গায় এই বিদ্যালয়ের নাম পাওয়া যায় আমডোব মধ্যে ইংরেজি বিদ্যালয়।  সম্ভবত ইংরেজ আমলের ধাঁচে এই নামকরণ হয়েছিল। যদিও স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গে আর কোন মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয় ছিলনা। ১৯৫৬ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর দিনটি ছিল আমডোব  গ্রামের স্মরণীয় দিন। কারণ বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির খাতায় প্রথম এই দিনটির লিখিত বিবরণ পাওয়া গেছে। ঐদিন সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত্রি ৭ টা পর্যন্ত যে সভা হয়েছিল তাতে উপস্থিত ছিলেন - শ্রী দেবেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, শ্রী শ্রীপতিনাথ সেন, শ্রী বলরাম ঘোষ, শ্রী মন্মথ নাথ চক্রবর্তী, শ্রী গৌরমোহন সাহা, মহম্মদ সূরাতুল্লা  বিশ্বাস, শ্রী হেমরঞ্জন পাল  এবং শ্রী ভুবন মোহন বিশ্বাস মহাশয়েরা। এরা প্রত্যেকেই আমাদের নমস্য।  এদের সকলকে জানাই আমাদের অন্তরের বিনম্র শ্রদ্ধা। এই সময়ের সম্পাদক ছিলেন শ্রী দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস মহাশয় এবং সম্ভবত ক্ষমতাবলে বিডিও ছিলেন সভাপতি। স্বভাবতই বিভিন্ন সভাতে বিডিওর অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন ব্যক্তি সভা পরিচালনা করতেন।

বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন বেলঘড়িয়া থেকে আগত শ্রী সুধাংশু মোহন দত্ত মহাশয়। বিদ্যালয়ের প্রথম যে দুজন সহ শিক্ষক ছিলেন তাঁরা হলেন - শ্রী রবীন্দ্র নাথ সরকার এবং শ্রী মধুসূদন পাল মহাশয়। ১৯৫৭ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে ১৭ জন,ষষ্ঠ শ্রেণীতে ১২ জন এবং সপ্তম শ্রেণীতে ৪ জন ছাত্রের নাম ভর্তি খাতায় এবং হাজিরা খাতায় পাওয়া গেছে।ঐ বছরের ছাত্রদের মধ্যে পঞ্চম শ্রেণীতে এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক শ্রী গোপাল চন্দ্র মন্ডল, ষষ্ঠ শ্রেণীতে শ্রী প্রফুল্ল কুমার সবর ও সপ্তম শ্রেণীতে আমডোব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক স্বর্গীয় নন্দলাল বিশ্বাস মহাশয় দের নাম উল্লেখযোগ্য। আমডোব উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা, শিক্ষকতা এবং ছাত্র হিসেবে যারা যুক্ত ছিলেন তার থেকে এটা পরিষ্কার যে, এলাকার হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে এই বিদ্যালয় কে গড়ে তুলেছিলেন এবং শবর রাও সেই শিক্ষা অঙ্গনে এসেছিলেন।

মনে রাখতে হবে, যে সময়ের কথা আমরা আলোচনা করছি তখন মানুষ শিক্ষা সম্পর্কে তেমন সচেতন ছিল না। আমডোব পূর্ব পাড়া থেকে গাঙ্গুলিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা ছিল জঙ্গলাকীর্ণ, পথঘাট ভাল ছিলনা। বিশেষ করে বর্ষাকালে বাঁশঘাটা যাওয়ার রাস্তায় কাদায় পথ চলা ছিল দুরূহ। তখন আমডোব গ্রামের হাট বসত বর্তমান বিদ্যালয়ের পেছনদিকে,  বেতনা নদীর ধারে।তবে কাছাকাছি এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট বসত ঝাউখালি  গ্রামে। আমডোব থেকে বনগাঁ যাবার সদর রাস্তা ছিল আমডোব পশ্চিম পাড়ার মোড় থেকে পাটকেলপোতা হয়ে কোদালিয়া পার হয়ে।  বর্তমানে পশ্চিম পাড়ার মোড় থেকে রাস্তাটি পাকা হয়েছে। বর্তমানে আমডোব উচ্চ বিদ্যালয় যে স্থানে  অবস্থিত সেই জমি নেওয়া হয়েছিল ১৯৬০ সালে শ্রী  ফণীন্দ্র নাথ বিশ্বাস এবং ১৯৬১সালে গ্রামের জমিদার শ্রী প্রীতিনাথ চট্টোপাধ্যায় এর কাছ থেকে।প্রাইমারি স্কুলের অবস্থান থেকে ১৯৬০-১৯৬১  সালে বিদ্যালয় ভবন স্থানান্তরিত হয় বর্তমান বিদ্যালয়ের পূর্বদিকে,  টিনের চালা যুক্ত ঘরে তার শুরু।  এইখানে একটি কামিনী গাছের কথা অনেকের মুখেই শোনা, ঠিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে একটি বড় গর্তের কথাও অনেকেই বলেন।ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হয়েছেন কালুপুর গ্রামের শ্রী পঞ্চানন মন্ডল মহাশয় এবং তারপর শ্রী দিলীপ কুমার  ঘোষ মহাশয়। শ্রী দিলীপ কুমার ঘোষ মহাশয় এর কর্মজীবন এর মাঝখানে আমরা দুজন কর্মরত প্রধান শিক্ষকের নাম পেয়েছি, তারা হলেন শ্রী শ্রীদাম বিশ্বাস ও শ্রী জীবন কৃষ্ণ দে বিশ্বাস মহাশয়। ১৯৬১ সালে বিদ্যালয়টি অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত হয়।  ১৯৬৬ সালে আমডোব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রশাসনে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন হয়েছিল। এইসময় প্রধান শিক্ষক হন শ্রী ধীরেন্দ্র নাথ রায় মহাশয় এবং সম্পাদক  ছিলেন শ্রী সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ মহাশয়। শ্রী সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ মহাশয় ১৯৭৫ সালে তার অকস্মাৎ  মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বিদ্যালয়ের সম্পাদক ছিলেন।  এরপর বিদ্যালয়ের সম্পাদক হন নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস  মহাশয়। ১৯৮০ সালের আগে বিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষকেরই নাম পাওয়া গেছে যারা কেউই বিদ্যালয়ের সঙ্গে বেশিদিন যুক্ত ছিলেন না। কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর পরই তারা বিদ্যালয় ত্যাগ করে যান। মনে রাখতে হবে যে সেই সময়ে শিক্ষকদের বেতন হতো ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে চাঁদা তুলে। ওই সময়েই শান্তিকুমার রায় চৌধুরী, বৈদ্যনাথ বসু,  শ্রী দুলাল মন্ডল, অসীম কুমার হালদার,  শ্রী সুভাষ দেব বর্মন,  শ্রী দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, শ্রী গোপাল চন্দ্র মন্ডল - এদের মধ্যে কয়েকজন ১৯৮০ সালের পরেও বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৬ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হন  বিদ্যালয় এর সেই সময়ের সহ শিক্ষক শ্রী সুভাষ দেব বর্মন মহাশয়। শ্রী সুভাষ দেব বর্মন মহাশয় প্রায় ২৭ বছর প্রধান শিক্ষকের পদ অলংকৃত  করেছিলেন।যদিও এই সময় বিদ্যালয়টি জুনিয়র হাই স্কুল ছিল তবুও বিদ্যালয়ে নবম ও দশম শ্রেণি পড়ানো হতো  ১৯৭৩ সাল থেকেই। এরপর ১৯৭৬-১৯৭৭ সাল থেকে এই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার বিশেষ অনুমোদন ছিল। কিন্তু  ১৯৮০ সাল থেকে আবার নবম শ্রেণী উঠে যায়। এই সময়ে বহু শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ বিনা বেতনে এই বিদ্যালয়ে নবম ও দশম শ্রেণীতে পাঠ দান করতেন। পরে নানা কারণে  তাঁরা বিদ্যালয় পরিত্যাগ করে যান। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক শ্রী নারায়ন চন্দ্র রায় এবং শ্রী পঙ্কজ বিশ্বাস মহাশয় সেই সময় থেকেই এই বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শ্রী সুভাষ দেব বর্মন মহাশয় প্রধান শিক্ষক হওয়ার পরই গৃহ সংস্কারে মন দেন। ১৯৭৬ সালে টিনের চালা যুক্ত ইটের দেওয়ালের ঘর স্থাপিত হয়,  পূর্ব-পশ্চিম বরাবর -আজ যেখানে বিদ্যালয়ের মূল ভবনটি অবস্থিত।