প্রথমে বিদ্যালয়টি চালু হয় গুটিকয়েক ছাত্র নিয়ে, মহম্মদ দোয়েম আলি-র পিতা দিল মহম্মদ-এর মাটির বাড়ির দলিজ-এ। প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন প্রয়াত গোলাম রসুল। ১৯৫৫ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারী বিদ্যালয়টি অনুমোদন পায়। প্রয়াত সেখ পরান আলি-র দান করা জমিতে ১৯৫৭ সালে গড়ে ওঠে বর্তমান স্থানের বিদ্যালয় ভবনটি। ইটের দেওয়াল, টালির চাল ছিল তখন। ঢালাই ছাদ হয়েছিল ১৯৭৮-এর বন্যার পরে।
এখানে তখন এক জন মাত্র সহ শিক্ষক ছিলেন - প্রয়াত হিমাংশু পাড়ই। তাঁর সঙ্গে মিউচুয়াল ট্রান্সফার নিয়ে ১৯৫৮ সালের ১ এপ্রিল এখানে এসে যোগদান করেন মহাদেব সেনগুপ্ত। সে সময় এখানে ছাত্র সংখ্যা ছিল ২৪। তাদের মধ্যে কোন ছাত্রী ছিল না। মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার চল তো ছিলই না। গরিষ্ঠ সংখ্যক এলাকাবাসীই শিক্ষার ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন। সে সময় এখানে স্কুলের গন্ডি পেরানো মানুষজন ছিলেন হাতে গোনা।
গ্রামটি দিনের বেলা ঘুমিয়ে থাকত আর জেগে উঠত রাত্রিতে। সামান্য কিছু জনের কৃষি জমি ছিল অথবা ব্যবসা করতেন। দু-এক জন চাকরিও করতেন। বাদবাকি বেশির ভাগই হয় মিস্ত্রী না হয় শ্রমিকের কাজ করতেন। আর কেউ কেউ রাতের আঁধারে নেমে পড়তেন এক অসামাজিক বৃত্তিতে, যা রোধ করতে গড়ে উঠেছিল আর.জি. পার্টি (Regist Group)। তৎকালীন প্রধান শিক্ষক গোলাম রসুলসহ বেশ 'কয়েকজন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন এই পার্টির সদস্য।
গ্রামের অনেক পুরুষই প্রচন্ড নেশা করতেন। ফলে নেশার খরচ পুষিয়ে সংসার চালাবার টাকাই জোটাতে পারতেন না। আর এক দল রোজগেরে পুরুষ কিছু টাকা রোজগার করে গ্রামে ফিরতেন। সে টাকা নিঃশেষ করে আবার ধার-দেনায় জড়িয়ে বাধ্য হতেন পুনরায় রোজগারের ধান্দায় বেরিয়ে পড়তে। এই আর্থ-সামাজিক পরিবেশে সেদিনের নবীন বিদ্যালয়টি যে পথ চলা শুরু করেছিল আজ সে পঞ্চাশ বছর পার করে গিয়েছে (২০০৫)। বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় ইতিমধ্যে মেয়েরাও ছাত্রী হিসাবে যোগ দিয়েছে। এখন গ্রাম থেকে অনেকেই উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক স্তর ও নানা পেশার বিবিধ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করছেন এবং কেউ কেউ নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিতও করেছেন।